বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় আমরা অনেকেই মন মতো সাবজেক্ট পাই না। আবার অনেকেই কি সাবজেক্ট নিবে সেটাই চিন্তা করে পায় না। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ বছর পড়া মানে শুধু ৪ বছর একটা সাবজেক্ট পড়া না, এই সাবজেক্ট নিয়া তোমায় সারাজীবন থাকতে হবে। এই সাবজেক্টের ওপর তোমায় সারাজীবন চাকরি করতে হবে। তাই জীবনের এই মুহুর্তে এসে সাবজেক্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হওয়া দরকার।
জীবনে ১০-১২ বছর পড়াশুনা করে এসেছো। সব পাঠ্য বই যে ভাল লাগবে তেমন কোনো কথা না। হয়ত কারো ম্যাথ ভাল লাগে কিন্তু ক্যামেষ্ট্রি ভাল লাগে না, আবার হয়ত কারো ফিজিক্স ভাল লাগে। একেক মানুষের পছন্দ একেক রকম। তাই সবার ভাল লাগাও আলাদা। কিন্তু ছোট থাকতে ক্লাসে যখন কেউ বলত তোমরা কি হতে চাও? তখন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া মাথায় কিছু আসতো না। কারন তখন আমরা আমাদের ভাল লাগার জায়গাটা জানতাম না। সবার কথা শুনে আমরাও ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বলে দিতাম।
এরপর যখন আমরা বড় হই, তখন অনেকেই তার ভাল লাগার জায়গাটা বুঝতে পারে।
উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত তো আসলে পড়াশুনা তেমন আলাদা না। বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা আর না হয় মানবিক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটা সাবজেক্ট আলাদা হয়ে যায়। তাই এখানে শুধুমাত্র ভাল লাগার সাবজেক্ট নিয়া পড়ার সুযোগ থাকে।
আর একটি বিষয়, যার যে সাবজেক্টে ভাল লাগে সেটাতেই তার পড়া উচিৎ। তাহলে পড়াশুনা তার কাছে বোঝা হয়ে দাড়াবে না। এই বিষয়ের ওপর চাকরি পেতে তার কষ্টও হবে না, এবং চাকরি জীবনেও সে দ্রুত অনেক উন্নতি করতে পারবে। ধরো কারো ম্যাথ করতে ভাল লাগে, কিন্তু সে বাবা-মায়ের ইচ্ছার কারনে ডাক্তারী পড়া শুরু করল। এখন চিন্তা করো তার অবস্থা কি হবে? আগে সে ম্যাথের জাহাজ ছিল, কোনো ম্যাথ সে একবারের বেশি দেখি নি, পরিক্ষায় ম্যাথে তার উপরে কেউ কখনও নাম্বার পায় নি। কিন্তু এখন মুখস্ত পড়া তাকে পড়তে হচ্ছে, এদিকে মুখস্ত পড়া তার মনেও থাকে না, পরিক্ষায় সে ভাল নাম্বারও পায় না। সে কি জীবনে ভাল ডাক্তার হইতে পারবে? কিন্তু সে যদি ম্যাথ নিয়া পড়ত, ভাল কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে PHD করত, তারপর সে বিভিন্ন বিষয় নিয়া গবেষনা করত, একসময় হয়ত সে একজন নামকরা বিজ্ঞানী হইত।
ধরো কারো ভাল লাগে কোডিং, কিন্তু সে যদি ফিজিক্স নিয়া পড়ে, তাহলে সে কি ভাল রেজাল্ট করতে পারবে? ঐ সাবজেক্টের ওপর চাকরী জীবন তার ভাল লাগবে? কিন্তু সে যদি CSE বা প্রোগ্রামিং রিলেটেড কোনো সাবজেক্ট নিয়া পড়ত, তাহলে সে জীবনে অনেক কিছুই করতে পারত।
এখন মূল কথা হইল, কোন সাবজেক্টে পড়বো কি পড়বো না, বা কোন সাবজেক্ট ভাল, কোন সাবজেক্টের চাকরী বাজার ভাল, এসব চিন্তা করা বাদ দাও। তোমার কি পড়তে ভাল লাগে, সেটা নিয়া পড়। তোমার যদি ফটোগ্রাফি ভাল লাগে তাহলে সেটাই করো জীবনে অনেক ডাক্তার ইন্জিনায়ারের চেয়ে উচু অবস্খানে থাকবা। যেটা ভাল লাগে না, বাবা-মা বা বন্ধু বান্ধবের কথাতে সেটা নিয়া পড়তে যেও না। মনে রেখ এই সাবজেক্ট নিয়া শুধু ৪ বছর পড়তে হবে তেমনটা নয়, সারা জীবন এই সাবজেক্ট নিয়া চলতে হবে। তাই হুজুগে মাতাল না হয়ে নিজের পছন্দ মতো সাবজেক্ট নিয়া পড়, একটা সফল এবং আনন্দময় ক্যারিয়ার গড়ে তোলো।
No comments:
Post a Comment